অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্যে আমরা হারাতে বসেছি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।
অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্যে আমরা হারাতে বসেছি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।
মা ফাতেমার (আ.) তাসবিহঃ
ইমাম আলী (আ.) যখন দেখলেন হযরত ফাতেমা (সালামুল্লাহ আলাইহা) ইমাম হাসান ও হুসাইন এবং হরযত জয়নাবের সেবাযত্ন, ঘরের সব কাজ ও স্বামীর খেদমত করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তখন মা ফাতেমাকে (সালামুল্লাহ আলাইহা) প্রস্তাব দিলেন যে রাসুলুল্লাহর কাছে গিয়ে ঘরের কাজে সহযোগিতা করার জন্যে একজন কাজের মানুষের আবেদন করবেন।[শেইখ সাদুক, মান লা ইয়াদারুহুল ফাকিহ, প্রকাশকাল ১৪১৩, ১খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা]। ইমাম সাদিকের (আ.) রেওয়ায়েত অনুযায়ী মহানবী (স.) যখন তাঁদের আবেদন সম্পর্কে অবহিত হলেন তিনি বললেন: হে ফাতেমা আমি তোমাকে এমন কিছু দান করবো যা কাজের মানুষ এবং সমস্ত দুনিয়া বা এই দুনিয়ায় যাকিছু আছে তার চেয়েও মুল্যবান শ্রেষ্ঠ। তিনি বললেন: প্রত্যেক নামাজের পর ৩৪ বার আল্লাহু আকবার ৩৩ আল হামদুলিল্লাহ ও ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ পাঠ করবে। এভাবেই একটি আসমানী হাদিয়া মা ফাতেমাকে (সালামুল্লাহ আলাইহা) উপহার দেয়া হলো। আর মা ফাতেমা (সালামুল্লাহ আলাইহা) তখন বললেন: আমি মহান পালনকর্তা ও তাঁর রাসুলের প্রতি সন্তুষ্ট।
মা ফাতেমা (সালামুল্লাহ আলাইহা) একটি পশমের সুতায় ৩৪ গিরা দিয়ে নামাজের পরপরই ঐ তাসবিহ যপ করতেন। ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে যে হযরত হামজা শাহাদত প্রাপ্ত হওয়ার পর হযরত ফাতেমা (সালামুল্লাহ আলাইহা) তাঁর কবরেস্থানের মাটি দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট গোলাকৃতির দানা তৈরী করেন এবং সেগুলো একটি সুতায় গেথে নামাজের পর তাসবিহ পাঠে সেগুলোর সাহায্য গণনা করতেন।[শেইখ মুফিদ/আল মাযার গ্রন্থ/ ১খন্ড/১৫০পৃষ্ঠা]
আর এখান থেকেই শুরু হয় মা ফাতেমার (সালামুল্লাহ আলাইহা) তাসবিহ নামকরণ। ইমাম বাকের (আ.) বলেন: পৃথিবীতে এমন কোন যপ বা জিকির নেই যাদ্দারা মহান প্রতিপালক মা ফাতেমার (সালামুল্লাহ আলাইহা) তাসবিহ পাঠের সমতুল্য গুণর্কীতন ও বান্দেগী প্রকাশ পেয়ে থাকে।[ হুররে মুলী/ ওয়াসাইলুশ শীয়া, প্রকাশকাল ১৪০৩ তা’ক্বিবাত অধ্যায়সমূহ, নবম অধ্যায়, ৪র্থ খন্ড, ১০২৪ পৃষ্ঠা, প্রথম হাদিস]
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন: تَسْبِیحُ فاطِمَةَعلیهاالسلام فِى کلِّ یوْمٍ فِى دُبُرِ کلِّ صَلاةٍ اَحَبُّ اِلَى اللَّهِ مِنْ صَلاةِ اَلْفِ رَکعَةٍ فِى کلِّ یوْمٍ অর্থাৎ আমার কাছে প্রতিদিন প্রত্যেক নামাজের পরপরই ফাতেমা (সালামুল্লাহ আলাইহা) তাসবিহ পাঠ প্রতিদিন ১০০০ রাকআত মুস্তাহাব নামাজ আদায়ের চেয়েও প্রিয়। [ হুররে মুলী/ ওয়াসাইলুশ শীয়া, প্রকাশকাল ১৪০৩ তা’ক্বিবাত অধ্যায়সমূহ, নবম অধ্যায়, ৪র্থ খন্ড, ১০২৪ পৃষ্ঠা, ৩ নম্বর হাদিস ]
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) আরো বলেন: مَنْ سَبَّحَ تَسْبِیحَ فاطِمَةَ الزَّهْراءِعلیهاالسلام فِى دُبُرِ الْفَرِیضَةِ قَبْلَ اَنْ یثْنِىَ رِجْلَیهِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে নামাজের অবস্থা ভঙ্গ হওয়ার [অতএব তাশাহুদ ও সালাম পড়ার পরপরই] পূর্বে ফাতেমা(সালামুল্লাহ আলাইহা) তাসবিহ পাঠ করেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন।[হুররে মুলী/ ওয়াসাইলুশ শীয়া, প্রকাশকাল ১৪০৩ তা’ক্বিবাত অধ্যায়সমূহ, নবম অধ্যায়, ৪র্থ খন্ড, ১০২২ পৃষ্ঠা, ৪ নম্বর হাদিস]
অতএব প্রত্যেক নামাজের পর একখানি ফজিলাতপূর্ণ মুস্তাহাব আমল আর কোনটি নেই শুধু তাই নয় রেওয়ায়েত অনুযায়ী ফজরের নামাজ শেষে তাসবিহ পাঠ মুস্তাহাবে মুয়ক্কাদা স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে। অথচ কিছু ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের মুবাল্লিগদের এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে যার ফলে তারা নিজের অঞ্চলে ফিরে নামাজ শেষে এমনসব জিকির পাঠ করেন যার ফলে মা ফাতেমার(সালামুল্লাহ আলাইয়া)নিয়মমত তাসবিহ থেকে মোমেনিনগন বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই সমস্ত অঞ্চলের মুবাল্লিগতগণ ও সুধী আলেমগণের দায়িত্ব উল্লেখিত হাদিস ও রেওয়ায়েত সমূহের আলোকে নামাজের শেষে মা ফাতেমা (সালামুল্লাহ আলাইহার) তাসবিহ পাঠের সাংস্কৃতি পুণরায় প্রত্যাবর্তনের জন্যে সচেষ্ট হওয়া। এমন কি দ্বীন বিশেষজ্ঞ মার্যায়ে তাক্বলিদগণের দৃষ্টিতে মা ফাতেমার (সালামুল্লাহ আলাইহা) তাসবিহ পাঠ শুকরের সিজদার পূর্বেই আদায় করার নির্দশ দেয়া হয়েছে।
একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সুন্নতকে সমাজে পূণরায় ফিরিয়ে আনতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। ইনশাল্লাহ মহান আল্লাহর রব্বুল আলামীন আপনাদের সবাইকে অতি উত্তম প্রতিদান দিবেন।
osthir
ReplyDelete